যা আমরা উলটো বুজেছি কোরআন এর আয়াত

আমরা অনেকের মুখেই শুনতে পাই যে আল্লাহ তা'আলা সর্বত্র বিরাজমান। এই কথা সাধারন থেকে আলেম সমাজও বলে থাকেন। আর আমাদের আলেমদের দলীল হলোঃ

আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ 
وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٢:١١٥]
 অর্থাৎঃ "পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। অতএব তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববজ্ঞ।" [সূরা আল বাক্বারা,২/১১৫] 

অবতীর্ণ হওয়ার কারণ 
এ আয়াতে রসূল (সাঃ-কে এবং তাঁর সাহাবীবর্গকে (রাঃ) সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে, যাদেরকে মক্কা থেকে তারীয়ে  দেয়া হয়ছে ও তাঁর মসজিদে প্রবেশ করা হতে বিরত রাখা হয়েছে। মক্কায় অবস্থান কালে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। তখন কা'বা শরীফও সামনে থাকতো। মদীনায় আগমনের পর ১৬/১৭ মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসের মুখ করেই তারা নামায পড়েন। কিন্তু পরে আল্লাহ পাক কা'বা শরীফের দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ দেন। 

কুরআন মাজীদে সর্বপ্রথম রহিতকৃত (মানসুখ) হুকুম 

ইমাম আবূ আবীদ কাসিম বিন সালাম (রঃ)স্বীয় পুস্তক 'নাসিখ ওয়াল মানসুখ' এর মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা কএন যে, কুরআন মাজীদের মধ্যে সর্বপ্রথম মানসুখ হুকুম হচ্ছে এই কিবলাহই অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াতটিই। এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তে থাকেন। অতঃপর নিম্মের আয়াতটি অবতীর্ণ হয়ঃ 
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ
অর্থাতঃ যেখান হতেই তুমি বাইরে যাবে, স্বীয় মুখ মন্ডল মাসজিদ-ই-হারামের দিকেই রাখবে।' (২/১৪৯)
তখন তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে নামায পড়তে শুরু করেন। মদীনায় রসূল (সাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়তে থাকলে ইয়াহুদীরা খুবই খুশি হয়। কিন্তু কয়েকমাস পরে যখন এই হুকুম মানসুখ হয়ে যায় এবং তাঁর আকাঙ্ক্ষা ও প্রার্থনা অনুযায়ী বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে নামায পড়ার জন্যে আদিষ্ট হন তখন ঐ ইয়াহুদীরাই তাকে বিদ্রুপ করে বলতে থাকে যে, কিবলাহ পরিবর্তিত হলো কেন? তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ ইয়াহুদীদেরকে যেন বলা হচ্ছে যে, এ প্রতিবাদ কেন? যে দিকে আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হবে সে দিকেই ফিরে যেতে হবে। 

হযত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তচভ অর্থ হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিম যেখনেই থাক না কেন মুখ কা'বা শরীফের দিকে কর। কয়েকজন মনীষির বর্ণনা আছে যে, এ আয়াতটি কাবা শরীফের দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ দেয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং ভাবার্থ এই যে, পূর্ব ও পশ্চিম যে দিকেই চাও মুখ ফিরিয়ে নাও সব দিকই আল্লাহ তা'আলার এবং সব দিকেই তিনি বিদ্যমান রয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা হতে কোন জায়গা শুন্য নেই। যেমন তিনি বলেছেন... 
وَلَا أَدْنَىٰ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْثَرَ إِلَّا هُوَ مَعَهُمْ أَيْنَ مَا كَانُوا 
অর্থাৎঃ 'অল্প বেশি যাই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন, আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন।' [৫৮/৭] 
অতঃপর এই নির্দেশ উঠেগিয়ে কা;বা শরীফের দিকে মুখ করা ফরয হয়ে যায়। 

এ উক্তির মধ্যে রয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা হতে কোন যায়গা শুন্য নেই এর ভাবার্থ যদি আল্লাহ তা'আলার 'ইলম' বা অবগতি হয় তবে তো অর্থ সঠিক হবে যে, ' কোন স্থানই আল্লাহ পাকের ইলম হতে শুন্য নেই।' আর যদি এর ভবার্থ হয়, 'আল্লাহ তা'আলার সত্তা' তবে এটা সঠিক হবে না। কেননা, আল্লাহ রব্বুল আলামিন যে তাঁর সৃষ্টজীবের মধ্য হতে কোন জিনিসের মধ্যে সিমাবদ্ধ্য থাকবেন তা থেকে তাঁর পবিত্র সত্তা বহু উর্ধে। এই আয়াতটির ভাবার্থ এও বর্ণনা হয়েছে যে, এ নির্দেশ হচ্ছে সফরে দিল ভূলে যাওয়ার সময় ও ভয়ের সময়ের জন্য। অর্থাৎ এ অবস্থায় নফল নামায যে কোন দিকে মূখ করে পড়লেই চলবে। 

হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর উষ্ট্রর মুখ যে দিকেই থাকত তিনি সেই দিকে ফিরেই নামায পড়ে নিতেন এবং বলতেন; রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিয়ম এটাই ছিল।' সূতারাং এই আয়াতের ভাবার্থ এটাও হতে পারে। আয়াতের উল্লেখ ছাড়াই এই হাদীসটি সহীহ মুসলিম, জামেওউত তিরমিযী, সুনান-ই- নাসাঈ, মুসনাদের ইবনে আবি হাতিম, তাফসীর ইবনে মিরদুয়াই ইত্যাদির মধ্যেও বর্ণত আছে এবং মূল সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে। সহীহ বুখারীর মধ্যে রয়েছে যে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) কে যখন  ভয়ের সম্বন্ধে নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হতো তখন তখন ভয়ের নামায বর্ণনা করতেন এবং বলতেন, এরচেয়েও বেশি ভয় হলে পায়ে চলা অবস্থায় এবং আরোহনের অবস্থায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে নিও- মুখ কিবলার দিকে হোক আর নাই হোক। 

হযরত নাফে' (রঃ) বর্ণণা করেনঃ 'আমার ধারনায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) ওটা মারফু রুপে বর্ণণা করতেন।' ইমাম শাফেঈর (রঃ) প্রশিদ্ধ উক্তি এবং ইমাম আবু হানীফার (রঃ) উক্তি রয়েছে যে, সফরে সওয়ারির উপর নফল নামায পড়া জায়েয, সেই সফর নিরাপদেই হোক বা ভীতি পূর্ণই হোক বা যুদ্ধের হোক। ইমাম মালিক (রঃ) এবং তাঁর দল এর উলটো বলেন, ইমাম আবু ইউসুফ এবং আবু সাঈদ ইসতাখারী (রঃ) সফর ছাড়া অনয় সময়েও নফল নামাজ সওয়ারীর উপর পড়া জায়েয বলে থাকেন। হযরত আনাস (রাঃ) ও এটা বর্ণণা করেছেন। 

ইমাম আবু জাফর তাবারীও (রঃ) এটা পছন্দ করেছেন। এমনকি তিনি ত পায়ে চলা অবস্থায়েও এটা বৈধ বলেছেন। কোন মুফাসসীরএর মতে এ আয়াতটি ঐ সব লোকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয় যারা কিবলাহ সম্পর্কে অবহীত ছিল না এবং নিজ নিজ ধারনা মতে বিভিন্ন দিকে মুখ করে নামায পড়েছিল। এ আয়াতের দ্বারা কাদের নামাযকে সিদ্ধ বলা হয়েছে । 

হযরত রাবেয়াহ (রাঃ)-বলেনঃ 'আমরা এক সফরে নবী সাঃ-এর সঙ্গে ছিলাম, এক মনযিলে আমরা অবতরন করি। 
রাত্রি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। জনগন পাথর নিয়ে নিয়ে প্রতিকরুপে কিবলাহর দিকে রেখে নামায পড়তে আরম্ভ করে দেন। সকাল হলে দেখা যায় যে কিবলাহর দিকে মুখ করে নামায আদায় হয় নাই। আমরা রসুল্লুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট এটা বর্ণণা করলে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।' 

অনেকের মতে সফর থাকা অবস্থায় বা চলা অঅস্থায় নফল নামাজ যে কোন দিক পড়লেই চলবে। কিন্তু ফরয নামাজ কিবলার দিকেই আদায় করতে হবে। 
আমাদের জানার আরও একটি বিষয়, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান এ কথার কোন ভিত্তি নেই, মূলত এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারন ছিল, তাদের নামাযের ব্যাপারে, যে দিক ই হোক নামায আদায় করতে হবে তারা যেন নামায না ছেড়ে দেন সেই জন্যেই এই আয়াত নাযীল হওয়ার কারন, তাই সাহাবা রাঃ-গন যেই ভাবে বুজেছে কোরআন কে , আমাদের ও সেই ভাবে বুজতে হবে , কোন ভূল ব্যখ্যা করে ও পড়ে নিজেকে ধংশের পথে ঠেলে দেয়া যাবে না। 
নাম্বার ২- এই আয়াত মানসুখ বা রুহীত হওয়াতে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান বলার কোন অবকাশ নেই। অনেক প্রমান রয়েছে যে আল্লাহ আরশের উপরেই রয়েছেন যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 
الرَّحْمَٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَىٰ [٢٠:٥]
পরম করুণাময় আরশের উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। (সূরা ত্বো-হা- ২০/৫)
স্পষ্ট আয়াত স্পষ্ট প্রমান হয় যে আল্লাহ সর্বত্র বিরজমান নন, তিনি আরশের উপরেই আছেন। 
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সঠিক বুজদান করুক, আমিন। 

 

Comments

Popular posts from this blog

তিনটি বিশ্বাস সকল ধর্মের মানুষ-ই মানত

কর্মের মাধ্যমে কালেমার অর্থ পরিবর্তন

উম্মাহ