ইবাদত এর পূর্বে ঈমান জরূরী

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময় অতি দয়ালু ।
বিষয়ঃ ইবাদত এর পুর্বে ঈমান ঠিক করা জরূরী।
সংকলনেঃ অন্তর বীন আইয়ূব  fb.com/ontor7

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুনাময় অতি দয়ালু ।
বিষয়ঃ ইবাদত এর পুর্বে ঈমান ঠিক করা জরূরী।
সংকলনেঃ অন্তর বীন আইয়ূব  fb.com/ontor7

ইসলামের অতি গুরত্ব ইবাদত হলো স্বলাত এরপরে যাকাত, যার স্বলাত নেই তাঁর ইসলাম নেই। এটা জানা সত্বেও অনেকেই আমরা স্বলাত আদায় করি না, এতে এই হলো যে, আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলার হুকুম মানি না। আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলার হুকুম এই কারনে মানিনা কারন আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলাকে ভয় করিনা অথবা ভালবাসি না, অথবা পছন্দ করি না। যদি ভালবাসার কথা বলি তাহলে আমরা একটি আয়াত দেখে নেই
“وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ ۗ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ”
অনুবাদঃ আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর।[১]
সহীহ হাদীস থেকে জানতে পারি যে…
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালবাসার পাত্র হই।”[২]
কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জানতে পারলাম যে, আল্লাহকে ভালবাসতে হবে দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি কারন এই আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমাদেরকে যিনি পয়দা করেছেন। আমরা যদি আল্লাহর হুকুম অমান্য করি? যদি তাঁর হুকুম সমূহ না মেনে চলি তাহলে কি হবে? উপরে আমরা জানতে পারলাম আল্লাকে ভালবাসার কথা পবিত্র কুরআন থেকেই জানি… আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অনুবাদঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।”[৩]
আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্য হই, যদি তাহার হুকুম না মানি, আমরা তাহার বিধান মতে না চলি তাহলে আল্লাহ্‌ আমাদের কি করবেন? সে কথা আমরা আল্লাহরা কাছে থেকেই জেনে নেই … আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ
অনুবাদঃ “যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।”[৪]
এখানে আগুন বলতে আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা জাহান্নাম কে বুজিয়েছেন। তাই আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্য হই কাফেররা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারনে ত্রা জাহান্নামি হবে আমরা মুসলিম হওয়া সত্বেও যদি আল্লাহর হুকুম ও বিধান মতে না চলি তাহলে আমাদের ও কাফেরদের মাঝে পার্থক্য রইল কি? তাই আগে আমাদের জানতে হবে মুসলিম এই নামের অর্থ কি? ইসলাম এর শব্দের অর্থ কি? আর শুধু জানাই আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে সঠিক ভাবে জানা জ্ঞান হাসিল করা ও মেনে চলা। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি মক্কার মুশরিকরাও ইবাদত করত কিন্ত ইবাদত করার পরও তাঁরা কেন জাহান্নামি ? এর মূল কারন হলো ঈমান। তাদের ঈমান ঠিক ছিল না যেমন আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের ব্যাপারে বলেছেনঃوَكَأَيِّنْ مِنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ
অনুবাদঃ “অনেক নিদর্শন রয়েছে নভোমন্ডলে ও ভু-মন্ডলে যেগুলোর উপর দিয়ে তারা পথ অতিক্রম করে এবং তারা এসবের দিকে মনোনিবেশ করে না। অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।”[৫]
এটাও স্বরণ রাখা প্রয়োজন যে, কতগুলা শিরক খুবই হালকা ও গোপনীয় হয়। স্বয়ং শিরককারীও ওটা বুঝতে পারে না।
হযরত হুযাইফা (রাঃ) একজন রুগ্ন ব্যাক্তির নিকট গমন করেন, তাঁর হাতে একটি সূতা বাধা ছিল। তিনি ওটা দেখে ছিড়ে ফেললেন, এবং বল্লেনঃ “মুমিন হয়েও শিরক করছো?” অর্থাৎ তিনি এই আয়াতটিও পাঠ করেন, হাদীসে আছে যে, যে যে ব্যাক্তি গাইরুল্লাহর নামে কসম খেল সে শিরক করল।”[৬]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “ঝাড় ফুঁক, সূতা এবং মিথ্যা তাবীজ শিরক। [৭]
কি ভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে হবে তা রসূল সাঃ আমাদের শিখিয়েছেন তাহলো;
‘আয়িশাহ হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়-ফুঁক করতেন। আর এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ ব্যথা দূর করে দাও, হে মানুষের পালনকর্তা। আরোগ্যদানের ক্ষমতা কেবল তোমারই হাতে। এ ব্যথা তুমি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারে না।” [৮]
তাই আমাদের ঈমান হতে হবে মজবুত একমাত্র আল্লাহর জন্য আমাদের যে কোন বিপদ আসতে পারে এবং সেই বিপদ হতেও আমাদের রক্ষা করবেন একমাত্র আল্লাহ্‌ তা’আলা। এখানে কোন মাধ্যম এর দরকার নাই। অনেকেই মনে করে থাকি যে, কোন মাধ্যম হলে খুব ভাল হয় তাই আমরা মাধ্যম হিসাবে বেছে নেই পীর বা ফকির। এবং আমরা এই বলে শান্তনা দিয়ে থাকি যে, ভাল করবে আল্লাহ্‌ পীর হলো উছিলা মাত্র বা ফকির হলো উছিলা মাত্র। আর আমারা নিজেরা এইভাবে নিজেদেরই ধুকায় ফেলে শিরকে পতিত হচ্ছি, আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা নিজেই কোন মাধ্যম ব্যতীত ক্ষমা চাইতে বলেছেন তাঁর নিকট তিনি বলেছেনঃ
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অনুবাদঃ অতঃপর অন্যান্যরা যেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [[9] 
আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা আরো বলেনঃ
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
এবং যখন আমার সেবকবৃন্দ (বান্দা) আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাওঃ নিশ্চয়ই আমি সন্নিকটবর্তী। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিই; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে – তাহলেই তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হতে পারবে। [১০] -এই আয়াতে আরো পরিষ্কার হয়েগেলে যে, আল্লাহর কাছে চাইতে, ক্ষমা বা দুয়া এর জন্য কোন মাধ্যম এর দরকার নাই। এই জন্য আমাদের দরকার ঈমন শক্ত বা মজবুত করা দরকার, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। [ 2:285 ]
উপরের এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, কোরআন থেকে কোন আদেশ বা নিষেধ জানতে পারলে তা অবশ্যই মেনে নিতে হবে কোন মতেই মুখ ফেরানো মুসলিমের ঈমান্দার এর কাজ নয়। তদ্রুপ, হাদীস যখন সহীহ প্রমাণীত হবে তেমনী ভাবে তখন ঈমান্দার এর মুখে আসবে وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا সে বলবে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।
আমাদের মাঝে অনেক মতবিরোধ থাকাটাই স্বাভাবিক, তাই যখনই কোন মতবিরোধ হবে তখন আমরা কোতাহ্য যাব? এই ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা বলেছেনঃ
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। [ 4:65 ]
আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা তাঁর কসম করে বললেন যে, আমরা আমাদের দ্বন্দ হা মতবিরোধ এর ফয়সালার ব্যাপারে যদি রসূল সাঃ (সহীহ হাদীস)কে না মানি তাহলে সে মুমিন হবে না। বা বিশ্বাস স্থাপন কারী হবে না, কোন ঈমানদার তা অমান্য করতে পারে না। এখানে আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা অনেক গুরত্ব দিয়ে বলেছেন, তাঁর কসম দিয়ে। খুব গুরত্বগূর্ণ কথা যা আমাদের মনযোগ সহকারে বুঝা দরকার যে, আল্লাহ্‌ কসম দিয়ে বলেছেন। তাই সংক্ষেপে এই বলতে চাই যে, যদি ঈমান ঠিক না থাকে তাহলে আমল কোন কাজেই আসবে না। তাই আগে ঈমান ঠিক করে পরে আমলের দিকে … যেতে হবে আমাদের। আমল তো মক্কার কুফফাররা ও করেছে, তারাও হজ্জ করেছে, তারাও সিয়াম রেখেছে, তারাও আল্লাহ্‌ কে মানত এত সত্তেও তাঁরা জাহান্নামি কেন? কারন তাঁরা ঈমান আনার সাথে সাথে শিরক ও করত। তাদের ঈমান বিশুদ্ধ ছিল না। আমাদের কে আগে ঈমান বিশুদ্ধ করতে হবে, তবে অল্প আমলেও জান্নাত লাভ করা যাবে। আল্লাহ্‌ যেন আমাদের মুমিনদের সাথী করেন, এবং ঈমান সহ মৃত্যুদান করেন, আমিন।

[১]সূরার নামঃ আল বাক্বারা
সূরার নাম্বার ২
আয়াত নাম্বারঃ ১৬৫

[২]বর্ণনাকারির নামঃ আবূ হুরাইরাহ (রাযি.)
তাওহীদ প্রকাশনীঃ হাঃ নাম্বার ১৪
আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩,
ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩

[3]সূরার নামঃ আল ইমরান
সূরার নাম্বারঃ ৩
আয়াত নাম্বারঃ ১০২ 

[৪ ] সূরার নামঃ নিসা
সূরার নাম্বারঃ ৪
আয়াত নাম্বারঃ ১৪

[৫] সূরার নামঃ ইউসুফ
সূরার নাম্বারঃ ১২
আয়াত নাম্বারঃ ১০৫-১০৬

[৬] এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (র) হযরত ইবনু উমর (রা) হতে বর্ণ্না করেছেন। এবং এ হাদীসটি কে তিনি হাসান বলেছেন।

[৭] এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (র) ও ইমাম আবু দাউদ (র) প্রভৃতি গুরুজন বর্ণ্না করেছেন। 

[৭] সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৫৭৪৪। আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২০)

[৯] সূরার নামঃ বাক্বারা
সূরার নাম্বারঃ ২
আয়াত নাম্বারঃ 

[১০] সূরার নামঃ বাক্বারা
সূরার নাম্বারঃ ২ 
আয়াত নাম্বারঃ ১৮৬ইসলামের অতি গুরত্ব ইবাদত হলো স্বলাত এরপরে যাকাত, যার স্বলাত নেই তাঁর ইসলাম নেই। এটা জানা সত্বেও অনেকেই আমরা স্বলাত আদায় করি না, এতে এই হলো যে, আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলার হুকুম মানি না। আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলার হুকুম এই কারনে মানিনা কারন আমরা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলাকে ভয় করিনা অথবা ভালবাসি না, অথবা পছন্দ করি না। যদি ভালবাসার কথা বলি তাহলে আমরা একটি আয়াত দেখে নেই
“وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ ۗ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ”
অনুবাদঃ আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর।[১]
সহীহ হাদীস থেকে জানতে পারি যে…
“আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালবাসার পাত্র হই।”[২]
কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জানতে পারলাম যে, আল্লাহকে ভালবাসতে হবে দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি কারন এই আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। আমাদেরকে যিনি পয়দা করেছেন। আমরা যদি আল্লাহর হুকুম অমান্য করি? যদি তাঁর হুকুম সমূহ না মেনে চলি তাহলে কি হবে? উপরে আমরা জানতে পারলাম আল্লাকে ভালবাসার কথা পবিত্র কুরআন থেকেই জানি… আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অনুবাদঃ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।”[৩]
আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্য হই, যদি তাহার হুকুম না মানি, আমরা তাহার বিধান মতে না চলি তাহলে আল্লাহ্‌ আমাদের কি করবেন? সে কথা আমরা আল্লাহরা কাছে থেকেই জেনে নেই … আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ
অনুবাদঃ “যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।”[৪]
এখানে আগুন বলতে আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা জাহান্নাম কে বুজিয়েছেন। তাই আমরা যদি আল্লাহর অবাধ্য হই কাফেররা আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারনে ত্রা জাহান্নামি হবে আমরা মুসলিম হওয়া সত্বেও যদি আল্লাহর হুকুম ও বিধান মতে না চলি তাহলে আমাদের ও কাফেরদের মাঝে পার্থক্য রইল কি? তাই আগে আমাদের জানতে হবে মুসলিম এই নামের অর্থ কি? ইসলাম এর শব্দের অর্থ কি? আর শুধু জানাই আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য হতে হবে সঠিক ভাবে জানা জ্ঞান হাসিল করা ও মেনে চলা। আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি মক্কার মুশরিকরাও ইবাদত করত কিন্ত ইবাদত করার পরও তাঁরা কেন জাহান্নামি ? এর মূল কারন হলো ঈমান। তাদের ঈমান ঠিক ছিল না যেমন আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের ব্যাপারে বলেছেনঃوَكَأَيِّنْ مِنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ
অনুবাদঃ “অনেক নিদর্শন রয়েছে নভোমন্ডলে ও ভু-মন্ডলে যেগুলোর উপর দিয়ে তারা পথ অতিক্রম করে এবং তারা এসবের দিকে মনোনিবেশ করে না। অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।”[৫]
এটাও স্বরণ রাখা প্রয়োজন যে, কতগুলা শিরক খুবই হালকা ও গোপনীয় হয়। স্বয়ং শিরককারীও ওটা বুঝতে পারে না।
হযরত হুযাইফা (রাঃ) একজন রুগ্ন ব্যাক্তির নিকট গমন করেন, তাঁর হাতে একটি সূতা বাধা ছিল। তিনি ওটা দেখে ছিড়ে ফেললেন, এবং বল্লেনঃ “মুমিন হয়েও শিরক করছো?” অর্থাৎ তিনি এই আয়াতটিও পাঠ করেন, হাদীসে আছে যে, যে যে ব্যাক্তি গাইরুল্লাহর নামে কসম খেল সে শিরক করল।”[৬]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) হতে বর্ণীত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাঃ বলেছেন, “ঝাড় ফুঁক, সূতা এবং মিথ্যা তাবীজ শিরক। [৭]
কি ভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে হবে তা রসূল সাঃ আমাদের শিখিয়েছেন তাহলো;
‘আয়িশাহ হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়-ফুঁক করতেন। আর এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ ব্যথা দূর করে দাও, হে মানুষের পালনকর্তা। আরোগ্যদানের ক্ষমতা কেবল তোমারই হাতে। এ ব্যথা তুমি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারে না।” [৮]
তাই আমাদের ঈমান হতে হবে মজবুত একমাত্র আল্লাহর জন্য আমাদের যে কোন বিপদ আসতে পারে এবং সেই বিপদ হতেও আমাদের রক্ষা করবেন একমাত্র আল্লাহ্‌ তা’আলা। এখানে কোন মাধ্যম এর দরকার নাই। অনেকেই মনে করে থাকি যে, কোন মাধ্যম হলে খুব ভাল হয় তাই আমরা মাধ্যম হিসাবে বেছে নেই পীর বা ফকির। এবং আমরা এই বলে শান্তনা দিয়ে থাকি যে, ভাল করবে আল্লাহ্‌ পীর হলো উছিলা মাত্র বা ফকির হলো উছিলা মাত্র। আর আমারা নিজেরা এইভাবে নিজেদেরই ধুকায় ফেলে শিরকে পতিত হচ্ছি, আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা নিজেই কোন মাধ্যম ব্যতীত ক্ষমা চাইতে বলেছেন তাঁর নিকট তিনি বলেছেনঃ
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
অনুবাদঃ অতঃপর অন্যান্যরা যেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [[9] 
আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা আরো বলেনঃ
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
এবং যখন আমার সেবকবৃন্দ (বান্দা) আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাওঃ নিশ্চয়ই আমি সন্নিকটবর্তী। কোন আহবানকারী যখনই আমাকে আহবান করে তখনই আমি তার আহবানে সাড়া দিই; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে – তাহলেই তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হতে পারবে। [১০] -এই আয়াতে আরো পরিষ্কার হয়েগেলে যে, আল্লাহর কাছে চাইতে, ক্ষমা বা দুয়া এর জন্য কোন মাধ্যম এর দরকার নাই। এই জন্য আমাদের দরকার ঈমন শক্ত বা মজবুত করা দরকার, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। [ 2:285 ]
উপরের এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, কোরআন থেকে কোন আদেশ বা নিষেধ জানতে পারলে তা অবশ্যই মেনে নিতে হবে কোন মতেই মুখ ফেরানো মুসলিমের ঈমান্দার এর কাজ নয়। তদ্রুপ, হাদীস যখন সহীহ প্রমাণীত হবে তেমনী ভাবে তখন ঈমান্দার এর মুখে আসবে وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا সে বলবে, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।
আমাদের মাঝে অনেক মতবিরোধ থাকাটাই স্বাভাবিক, তাই যখনই কোন মতবিরোধ হবে তখন আমরা কোতাহ্য যাব? এই ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা বলেছেনঃ
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। [ 4:65 ]
আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা তাঁর কসম করে বললেন যে, আমরা আমাদের দ্বন্দ হা মতবিরোধ এর ফয়সালার ব্যাপারে যদি রসূল সাঃ (সহীহ হাদীস)কে না মানি তাহলে সে মুমিন হবে না। বা বিশ্বাস স্থাপন কারী হবে না, কোন ঈমানদার তা অমান্য করতে পারে না। এখানে আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা অনেক গুরত্ব দিয়ে বলেছেন, তাঁর কসম দিয়ে। খুব গুরত্বগূর্ণ কথা যা আমাদের মনযোগ সহকারে বুঝা দরকার যে, আল্লাহ্‌ কসম দিয়ে বলেছেন। তাই সংক্ষেপে এই বলতে চাই যে, যদি ঈমান ঠিক না থাকে তাহলে আমল কোন কাজেই আসবে না। তাই আগে ঈমান ঠিক করে পরে আমলের দিকে … যেতে হবে আমাদের। আমল তো মক্কার কুফফাররা ও করেছে, তারাও হজ্জ করেছে, তারাও সিয়াম রেখেছে, তারাও আল্লাহ্‌ কে মানত এত সত্তেও তাঁরা জাহান্নামি কেন? কারন তাঁরা ঈমান আনার সাথে সাথে শিরক ও করত। তাদের ঈমান বিশুদ্ধ ছিল না। আমাদের কে আগে ঈমান বিশুদ্ধ করতে হবে, তবে অল্প আমলেও জান্নাত লাভ করা যাবে। আল্লাহ্‌ যেন আমাদের মুমিনদের সাথী করেন, এবং ঈমান সহ মৃত্যুদান করেন, আমিন।

[১]সূরার নামঃ আল বাক্বারা
সূরার নাম্বার ২
আয়াত নাম্বারঃ ১৬৫

[২]বর্ণনাকারির নামঃ আবূ হুরাইরাহ (রাযি.)
তাওহীদ প্রকাশনীঃ হাঃ নাম্বার ১৪
আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩,
ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩

[3]সূরার নামঃ আল ইমরান
সূরার নাম্বারঃ ৩
আয়াত নাম্বারঃ ১০২ 

[৪ ] সূরার নামঃ নিসা
সূরার নাম্বারঃ ৪
আয়াত নাম্বারঃ ১৪

[৫] সূরার নামঃ ইউসুফ
সূরার নাম্বারঃ ১২
আয়াত নাম্বারঃ ১০৫-১০৬

[৬] এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (র) হযরত ইবনু উমর (রা) হতে বর্ণ্না করেছেন। এবং এ হাদীসটি কে তিনি হাসান বলেছেন।

[৭] এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (র) ও ইমাম আবু দাউদ (র) প্রভৃতি গুরুজন বর্ণ্না করেছেন। 

[৭] সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ৫৭৪৪। আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২০)

[৯] সূরার নামঃ বাক্বারা
সূরার নাম্বারঃ ২
আয়াত নাম্বারঃ 

[১০] সূরার নামঃ বাক্বারা
সূরার নাম্বারঃ ২
আয়াত নাম্বারঃ ১৮৬

Comments

Popular posts from this blog

তিনটি বিশ্বাস সকল ধর্মের মানুষ-ই মানত

কর্মের মাধ্যমে কালেমার অর্থ পরিবর্তন

উম্মাহ